ছবি সংগৃহীত
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম : আজ পবিত্র শবেবরাত। সারা বিশ্বের মুসলমান সমস্ত অন্তরাত্মা দিয়ে মনে করে এ মহান রাতে আল্লাহতায়ালা তাঁর সব বান্দার পরবর্তী বছরের পুরো রিজিক বণ্টন করেন, নির্ধারিত হয় সামনের বছর কেমন যাবে। প্রতিটি মুসলমান রাতব্যাপী ইবাদত-বন্দেগি করে। এ বরকতময় রাতে আল্লাহ রব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করি, দয়াময় আল্লাহ যেন আমাদের তাঁর সুশীতল ছায়াতলে রাখেন। দেশের প্রতিটি মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করেন- এ কামনা দয়াময় মহান রব্বুল আলামিনের কাছে এই মহান পবিত্র রাতে। ৭ মার্চ বাঙালি জাতির মানসপটে এক শ্রেষ্ঠ উজ্জ্বল দিন। হয়তো প্রশ্ন আসতে পারে, শুধু বাংলাদেশের নাগরিকই বাঙালি নয়, বিশ্বজোড়া আরও বাঙালি আছে। এক অর্থে বাংলাদেশের জন্য ৭ মার্চ এক অবশ্যম্ভাবী গুরুত্বপূর্ণ শ্রেষ্ঠ দিন। সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর সব বাঙালির জন্যও বটে। ১৯৪৮ থেকে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন এটা যেমন শুধু পূর্ববঙ্গের বাঙালির ছিল না, সব বাঙালির ছিল- তেমনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সেই স্বাধীনতায় ৭ মার্চের অনবদ্য ভূমিকা কখনো কখনো কেউ কেউ অস্বীকার করতে চায়। যা শাশ্বত সত্য, সে সত্য অস্বীকার করার চেষ্টা হীনমন্যতার লক্ষণ। কেউ কেউ বলতে চায় ৭ মার্চে জাতির পিতার ভাষণে অনেক কিছু অসম্পূর্ণ ছিল। কিন্তু আমার দৃষ্টিতে পৃথিবীর আর কোনো দেশের নেতা ও রকম একটি পরিপূর্ণ ভাষণ দিয়ে জাতিকে উজ্জীবিত করে তুলতে পারেননি। আজকাল নিরাপদে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ শোনা আর ৭ মার্চ ১৯৭১-এ সরাসরি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোনা মোটেই এক কথা নয়। তখনকার পরিবেশ পরিস্থিতি ছিল একেবারেই ভিন্ন। আকাশে হেলিকপ্টার উড়ছিল, তেজগাঁও বিমানবন্দরে ছয়টি জেট বোমা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। যার প্রধান কমান্ডার ছিলেন এ কে খন্দকার। যদি পাকিস্তান সরকার ইয়াহিয়া-টিক্কা খানেরা জেটগুলোকে উড়িয়ে এনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বোমা ফেলতে বলতেন তাহলে সেদিন এ কে খন্দকারও রুখে দাঁড়াতেন না। বরং পাকিস্তানের হুকুম মেনে বোমা ফেলে পাকিস্তান সরকারের আজ্ঞাবহ হতেন। আমরা যারা রাজনীতি করি আমাদের বিপদ চারদিকে। অনেকেই অনেকভাবে বলার চেষ্টা করেছেন বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে এত লোক ক্ষয় হতো না। পাকিস্তানিরা অক্রমণের কোনো সুযোগই পেত না। হুজুর মওলানা ভাসানী বলতেন, ‘কথা বলতে কোনো ট্যাক্সো লাগে না। তাই যে যা খুশি বলতে পারে। তেমন অনেকেই বলে।’ ইদানীং পন্ডিতদের কথা ঠিক তেমনি। পৃথিবীর কোথাও কোনো শত্রু দেশে প্রকাশ্যে লাখ লাখ মানুষের সামনে কখনো কোনো নেতা কোনো দিন অযোগ্য মূর্খের মতো স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি। ৭ মার্চের সভায় কমপক্ষে ২৫ লাখ লোকসমাগম হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা করলে হেলিকপ্টার তো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ওপরই ছিল আর তেজগাঁওয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জেটগুলো সোহরাওয়ার্দী পর্যন্ত আসতে দুই-এক মিনিট চক্কর দিয়ে সোজা হতে হয়তো আরও দুই মিনিট, অর্থাৎ ৫ মিনিটের মধ্যে ১০ লাখ লোক বোমার আঘাতে মারা যেত। হয়তো বঙ্গবন্ধুও মারা যেতেন। আমরা যারা গিয়েছিলাম সবাই মারা পড়তাম। স্বাধীনতার চিন্তা কম করে হলেও ১০০ বছর পিছিয়ে যেত। ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসার কথা ছিল। পয়লা মার্চ ইয়াহিয়া খান আচমকা সংসদ মুলতবি ঘোষণা করেন। বাংলার মানুষ গর্জে ওঠে। পল্টনের স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা ছিল। মুহূর্তের মধ্যে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। ৫০-৬০ হাজার লোক সেখান থেকে মতিঝিলে পূর্বাণী হোটেলের চারদিকে মিছিল করতে থাকে। কারণ ওই হোটেলে তখন আওয়ামী লীগের সংসদীয় কমিটির মিটিং হচ্ছিল। প্রায় সব এমএনএ উপস্থিত ছিলেন, অনেক এমপিও ছিলেন। শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশ জ্বলে ওঠে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২ মার্চ বাংলাদেশের পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় উত্তোলন করে। আমি ভেবে পাই না সেই ঐতিহাসিক পতাকা উত্তোলন দিবস আজ পর্যন্ত কেন জাতীয়ভাবে পালন করা হয় না! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘পতাকা দিবস’ পালন করে। কিন্তু যিনি পতাকা তুলেছিলেন এখনো তিনি বেঁচে আছেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয় না! এ কেমন পতাকা দিবস? সারা পৃথিবীর কথা বলতে পারব না, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এ উপমহাদেশে জাপানিরা যখন আন্দামান নিকোবর থেকে ব্রিটিশদের তাড়িয়ে দিয়েছিল তখন নেতাজি সুভাষ বোস আন্দামানে প্রথম স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। সেটা অনেকটাই ছিল নিরাপদ। কিন্তু একাত্তরের ২ মার্চ ডাকসুর ভিপি স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা আ স ম আবদুর রব যে পতাকা উত্তোলন করেছিলেন সেটা ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সামনে। শুধু একবার মেশিনগানের ট্রিগার টিপে দিলে আ স ম আবদুর রবসহ হাজারো নেতা-কর্মী হাওয়ায় মিলিয়ে যেতেন; যা হলফ করে বলা যায়। এটা এক ঐতিহাসিক দুঃসাহসিক ঘটনা। একে অস্বীকার করার কোনো জো নেই। তখন বাংলাদেশের পতাকা ছিল সবুজের ওপর লাল সূর্য। তার মধ্যে সোনালি বাংলাদেশের সীমানা। যদি আজকের লাল সবুজ পতাকা নিয়ে আমরা যুদ্ধে নামতাম তাহলে মহান ভারত চিন্তায় পড়ে যেত পশ্চিমবঙ্গের গলা ধরে আমরা টান দিচ্ছি কি না। কতটা দূরদৃষ্টি থাকলে ছাত্র নেতৃবৃন্দ ওইভাবে আমাদের যুদ্ধের সীমানা চিহ্নিত করে দিতে পারেন। স্বাধীনতার পর সীমানা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেটাই স্বাভাবিক। পৃথিবীর কোনো দেশের পতাকায় সে দেশের মানচিত্র নেই। এতে দেশের গোপনীয়তা নষ্ট হয়, দেশের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। ৩ মার্চ পল্টনে শপথ দিবস পালন করা হয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশের সৃষ্টির খুঁটিনাটি সবই ঘোষণা করা হয়েছিল। একটা দেশের জন্য যা প্রয়োজন তার কিছুই বাকি ছিল না। রাষ্ট্রের নাম, রাষ্ট্রপতি, রাষ্ট্রের জনক, জাতীয় সংগীত সবকিছু তুলে ধরা হয়েছিল। আমরা বাঙালিরা অনেক কিছুই যাচাই করে দেখি না। গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুর গুরুত্ব দিই না। আমরা অনেক কিছুই নিজের পক্ষে টানার চেষ্টা করি। যদি তা না করতাম, যেভাবে আমরা মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত এগিয়েছিলাম, মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে অগ্রসর হয়েছিল সবকিছু নিরাসক্তভাবে যদি তুলে ধরতাম তাহলে আজকের অনেক কিছু এমন হতো না। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান সিরাজ একবার সম্পূর্ণ ইশতেহার পাঠ করেছিলেন। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির পিতা ও রাষ্ট্রপতি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ জাতীয় সংগীত- একটি রাষ্ট্রের জন্য আরও যা যা প্রয়োজন তার সবকিছু ইশতেহারে ছিল এবং তিনি পাঠ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু সেখানে পৌঁছাতে একটু দেরি করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু সভামঞ্চে এলে শাজাহান সিরাজ আবার বঙ্গবন্ধুর সামনে একই ইশতেহার পাঠ করেন। ৩ মার্চের পর বঙ্গবন্ধুর গাড়িতে পাকিস্তানের পতাকার বদলে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর বাড়িতেও উড়তে থাকে বাংলাদেশের পতাকা। ১ মার্চ ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার পর বাংলাদেশে পাকিস্তানের কোনো প্রশাসনিক অস্তিত্ব ছিল না। সব চলত আওয়ামী লীগ এবং সংগ্রাম পরিষদের কথায়। পাকিস্তান ছিল তখন মৃত। ২৩ মার্চ ছিল পাকিস্তান দিবস। সেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়েছিল। পাকিস্তানের সব পতাকা সেদিন নামিয়ে ফেলা হয়েছিল। শুধু ক্যান্টনমেন্ট ছাড়া আর কোথাও পাকিস্তানের পতাকা দেখা যায়নি। আমাদের টাঙ্গাইলেও ২৩ মার্চ বিন্দুবাসিনী স্কুলমাঠে পতাকা দিবস পালন করা হয়েছিল। সেখানে সভাপতিত্ব করেছিলেন সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আলমগীর খান মেনু। পরিচালনার দায়িত্ব ছিল আমার ওপর। শপথবাক্য পাঠ করিয়েছিলেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী এমপি। আমার দৃষ্টিতে ২৩ মার্চ বিন্দুবাসিনী স্কুলমাঠে পতাকা দিবসে লতিফ সিদ্দিকীর কয়েক মিনিটের শপথ করানো তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ ঘটনা। কতটা রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও দেশপ্রেম থাকলে প্রায় ৩০-৪০ হাজার মানুষের এমন একটা নির্ভুল শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করা যায় এটা এখন ভেবে শেষ করা যাবে না।
৭ মার্চ নিয়ে বলতে গেলে অনেক কথা বলতে হয়। যাদের বোধশক্তি নেই, যারা খারাপ উদ্দেশ্যে তাড়িত তারা ৭ মার্চের ভাষণের অনেক ত্রুটিবিচ্যুতি বের করবেন। কিন্তু আমরা যারা নেতার অনুগত ছিলাম আমাদের কাছে তাঁর বক্তৃতায় কোনো ত্রুটি ছিল না। আমাদের কী করতে হবে, স্পষ্ট করে বলেছিলেন। তিনি যদি হারিয়ে যান, আমরা যদি তাঁকে না পাই আমরা কী করে পা ফেলব স্পষ্ট করে বলেছিলেন এবং এ-ও বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। তিনি মুক্তির সংগ্রাম আগে বলে স্বাধীনতার সংগ্রাম পরে বলেছিলেন। তিনি জানতেন স্বাধীনতার সংগ্রামের কথা বলা হয়ে গেলে মানুষ আর কোনো কিছু শুনবে না। তাই তিনি স্বাধীনতা শব্দটি পরে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যদি আর হুকুম দিবার না-ও পারি তোমরা ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলবে। হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, বাঙালি, নন-বাঙালি তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের। আমাদের যেন কোনো বদনাম না হয়।’ তিনি এও বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানি শেষ হানাদার থাকা পর্যন্ত তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।’ আমরা তা-ই চালিয়েছিলাম এবং যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলাম। যে কেউ যা কিছু বললেই হবে কেন। ভাষণটি ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে যে, এটা বিশ্বের একটি সেরা ভাষণ। ৭ মার্চ নিয়ে, ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে এ পর্যন্ত ১ হাজার গবেষণা হতে পারত। কিন্তু আমরা তা করিনি। আমরা অনেক কথা বলতে পারি। কিন্তু আমরা অনেকেই কাজ করতে পারি না। আমরা অনেকেই নিজেদের অভিজ্ঞতা কাগজ-কলমে ধরে রাখতে চাই না। যদি তা চাইতাম তাহলে আজকের প্রজন্ম অনেক সত্য জানতে পারত। মুক্তিযুদ্ধে আমাদের প্রধান সেনাপতি বঙ্গবীর আতাউল গনি ওসমানী উচ্চশিক্ষিত মানুষ ছিলেন। কিন্তু তাঁর জীবনকথা এক লাইনও লিখে যাননি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামান স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী সরকার পরিচালনা করেছিলেন, দয়া করে এক হরফ লিখে যাননি। শুনেছি আশিবার আমাদের প্রধান সেনাপতি বঙ্গবীর আতাউল গনি ওসমানী সেনাপ্রধান থেকে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কারণে তা করতে পারেননি। আতাউল গনি ওসমানী আমাদের প্রধান সেনাপতি হওয়ায় আমাদের ওপর এবং দেশের মানুষের ওপর এক পরম শুভ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। অন্যদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মেজর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ বঙ্গবীর আতাউল গনি ওসমানী আমাদের প্রধান সেনাপতি হওয়ায় পাকিস্তানি হানাদারদের ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়েছিল। এখন কে কী করেন, কীভাবে করেন তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া কী তা হয়তো অনেকেই সঠিকভাবে বলতে পারবেন না। কিন্তু ১৯৭০-৭১ সালে আমাদের নেতাদের প্রায় সব ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নির্ভুল ছিল।
৭ মার্চের ঐতিহাসিক বিষয়বস্তু নিয়ে আরও বেশ কিছু আলোচনা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু লেখা যখন এ পর্যন্ত এসেছিল হঠাৎ তখনই খবর এলো আমার এক চাচাতো ভাই ইকবাল সিদ্দিকী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ২ মার্চ গভীর রাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজেন্দ্রপুর থেকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে তাকে আনা হয়। ৩ মার্চ সকাল ১০টায় তাকে দেখতে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে গিয়েছিলাম। বছর বিশেক আগে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের ওই ১ নম্বর আইসিইউর ১০ নম্বর বেডে আমিও ভর্তি ছিলাম। ওই একই বেডে দুই-তিন দিন মা-ও ছিলেন। সেই বেডেই ৩ মার্চ সকাল ১০টার দিকে ইকবালকে দেখতে গিয়েছিলাম। ২৪ বছর ধরে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। কোনো আলসেমি ছিল না। যে কোনো কাজ দিলে সেসব পাগলের মতো করত। বক্তৃতা দিত অসাধারণ। সব থেকে বড় কথা, সবকিছু নিষ্ঠার সঙ্গে করত। কোনো কাজে ফাঁকিজুকি ছিল না। ৪ মার্চ আড়াই-তিনটার দিকে অবস্থা খুব খারাপ হয়ে এলে তাকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো কিছুতেই কাজ হয়নি। আল্লাহ রব্বুল আলামিন যার যতটুকু আয়ু দেন তার চেয়ে বেশি কী করে কে পাবে? তার ছোট ভাই মিঠু, মেয়ে-মাটি, স্ত্রী, পরম হিতৈষী আবদুর রহমান রাতদিন পাগলের মতো সেবা করেছে। কিন্তু আল্লাহ তার হায়াত রাখেননি। যে যাওয়ার সে যাবে কেউ ফেরাতে পারবে না। তাই ৫৪ বছর বয়সে হঠাৎ করেই ইকবাল চলে গেল। বড় খারাপ লাগছে। ভাইটিকে যখন যা বলেছি তা-ই করেছে। তার কাজে কোনো গাফিলতি ছিল না। ছোট্ট একটি প্রতিষ্ঠান কচিকাঁচা একাডেমিকে কত বড় করে তুলেছে। ইকবাল সিদ্দিকী মহাবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠালগ্নে আমি গিয়েছিলাম। সবকিছুই পড়ে রইল। প্রাণবায়ু বেরিয়ে গেলে আর কিছুই থাকে না। তাই হলো ইকবালকে নিয়ে। আল্লাহ ওকে বেহেশতবাসী করুন এবং ওর শোকসন্তপ্ত পরিবারকে শোক সইবার শক্তি দিন।
লেখক : রাজনীতিক